ঢাকা ১২:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা ঢলে বাজার বেসামাল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১২:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৭
  • ২১৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার শহরে ঢোকার আগে লিঙ্ক রোড। এখান থেকে উখিয়া হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত যাওয়া যায়। লিঙ্ক রোড থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে যেতে ছুটছে অটোরিকশা। চালক মো. বেলাল উখিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা। উখিয়ার এখন কী অবস্থা, জানতে চাইতেই তাঁর কণ্ঠে ক্ষোভের সুর। বললেন, আগে ১০ টাকায় দুটি কলা কিনতে পারতেন। এখন লাগে ২০ টাকা। আলু আগে ছিল ২০ টাকা, এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
অটোরিকশাচালক বেলালের দাবি, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। লোকজন ভালো নেই।
গতকাল মঙ্গলবার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা ঘুরে বেলালের কথার সত্যতা মেলে। গত দুই মাসে নতুন করে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশ করায় উখিয়া ও টেকনাফে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ তারা।
বিষয়টি স্বীকার করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন সিদ্দিক বলেন, হঠাৎ লোক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদাও বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকলে তো দাম বাড়বেই।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে এই উপজেলার জনসংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৮৯ জন। উখিয়ার জনসংখ্যা ছিল তখন ২ লাখ ৭ হাজার ৩৭৯ জন। গত ছয় বছরে দুই উপজেলার জনসংখ্যা আরও বেড়েছে। এর সঙ্গে গত দুই মাসেই দুটি উপজেলায় যোগ হয়েছে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। হঠাৎ এত লোকের আগমনে দুই উপজেলায় চাপ বেড়েছে। আগে থেকেই দুটি উপজেলায় প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
গতকাল দুপুরে কুতুপালংয়ের অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাঘাট এবং পাহাড় ও জঙ্গলে লোকজন গিজ গিজ করছে। তাদের কেউ ত্রাণের জন্য দাঁড়িয়েছে। কেউবা পাশের পাহাড়ে বাড়ি নির্মাণ করছে। বিক্রি হচ্ছে বাঁশ, কাঠসহ ঘর নির্মাণের নানা সামগ্রী। শিবিরের পাশে গজিয়ে উঠেছে নতুন নতুন ভাসমান দোকান। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও দোকান খুলেছে।
শিবিরের পাশে কাপড়ের ঘেরা দিয়ে চুল কাটার দোকান ‘সেলুন’ খুলেছেন মো. আবদুল্লাহ। তিনি নিজেকে পুরোনো রোহিঙ্গা দাবি করে বলেন, আগে টমটম চালাতেন। এখন লোকজন বেশি হওয়ায় চুল কাটার কাজ করছেন।
রোহিঙ্গা শিবিরের এক কিলোমিটারের মধ্যে কুতুপালং কাঁচাবাজার। এই বাজারের পাশে রাস্তায়ও গড়ে উঠেছে ভাসমান দোকান। গতকাল বিকেলে মানুষের ভিড়ে বাজারে পা ফেলার মতো অবস্থা ছিল না। আলু বিক্রি হচ্ছিল কেজিপ্রতি ৩০ টাকা দরে। নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকায়। এ ছাড়া বেগুন ৭০, মুলা ৬০ ও ঝিঙে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। মোটা মসুর ডালের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
উখিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, ৩৫ টাকা কেজির চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। তেল-ডাল-সবজি সবকিছু কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় মানুষের বাজার খরচ বেড়ে গেছে বলে তিনি জানান।
শুধু নিত্যপণ্য নয়, বেড়েছে গাড়িভাড়াও। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির থেকে উখিয়া উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। টমটম গাড়িতে (ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক) করে এই পথের ভাড়া আগে ছিল জনপ্রতি ১০ টাকা। দেড় মাস ধরে নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। মানুষের ঢলের কারণে দিনমজুরির কাজ ছেড়ে এখন টমটম চালাচ্ছেন মো. নূর। তিনি বলেন, যাত্রী প্রচুর। তাই আয় বাড়াতে টমটম চালাচ্ছেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।
এদিকে টেকনাফের বাসস্ট্যান্ড বাজারে গতকাল এক কেজি মুলা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। তিত করলা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। ঢ্যাঁড়স ৭০, বরবটি ৭০ টাকা ও মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে প্রতি কেজি সবজির দাম গড়ে ২০ টাকা করে বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানান।
এদিকে গতকালও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকেছে বলে জানান টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের টেকনাফ থেকে উখিয়ার বালুখালী শিবিরে পাঠানো হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রোহিঙ্গা ঢলে বাজার বেসামাল

আপডেট টাইম : ১২:১২:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার শহরে ঢোকার আগে লিঙ্ক রোড। এখান থেকে উখিয়া হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত যাওয়া যায়। লিঙ্ক রোড থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে যেতে ছুটছে অটোরিকশা। চালক মো. বেলাল উখিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা। উখিয়ার এখন কী অবস্থা, জানতে চাইতেই তাঁর কণ্ঠে ক্ষোভের সুর। বললেন, আগে ১০ টাকায় দুটি কলা কিনতে পারতেন। এখন লাগে ২০ টাকা। আলু আগে ছিল ২০ টাকা, এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
অটোরিকশাচালক বেলালের দাবি, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। লোকজন ভালো নেই।
গতকাল মঙ্গলবার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা ঘুরে বেলালের কথার সত্যতা মেলে। গত দুই মাসে নতুন করে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশ করায় উখিয়া ও টেকনাফে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ তারা।
বিষয়টি স্বীকার করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন সিদ্দিক বলেন, হঠাৎ লোক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদাও বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকলে তো দাম বাড়বেই।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে এই উপজেলার জনসংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৮৯ জন। উখিয়ার জনসংখ্যা ছিল তখন ২ লাখ ৭ হাজার ৩৭৯ জন। গত ছয় বছরে দুই উপজেলার জনসংখ্যা আরও বেড়েছে। এর সঙ্গে গত দুই মাসেই দুটি উপজেলায় যোগ হয়েছে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। হঠাৎ এত লোকের আগমনে দুই উপজেলায় চাপ বেড়েছে। আগে থেকেই দুটি উপজেলায় প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
গতকাল দুপুরে কুতুপালংয়ের অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাঘাট এবং পাহাড় ও জঙ্গলে লোকজন গিজ গিজ করছে। তাদের কেউ ত্রাণের জন্য দাঁড়িয়েছে। কেউবা পাশের পাহাড়ে বাড়ি নির্মাণ করছে। বিক্রি হচ্ছে বাঁশ, কাঠসহ ঘর নির্মাণের নানা সামগ্রী। শিবিরের পাশে গজিয়ে উঠেছে নতুন নতুন ভাসমান দোকান। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও দোকান খুলেছে।
শিবিরের পাশে কাপড়ের ঘেরা দিয়ে চুল কাটার দোকান ‘সেলুন’ খুলেছেন মো. আবদুল্লাহ। তিনি নিজেকে পুরোনো রোহিঙ্গা দাবি করে বলেন, আগে টমটম চালাতেন। এখন লোকজন বেশি হওয়ায় চুল কাটার কাজ করছেন।
রোহিঙ্গা শিবিরের এক কিলোমিটারের মধ্যে কুতুপালং কাঁচাবাজার। এই বাজারের পাশে রাস্তায়ও গড়ে উঠেছে ভাসমান দোকান। গতকাল বিকেলে মানুষের ভিড়ে বাজারে পা ফেলার মতো অবস্থা ছিল না। আলু বিক্রি হচ্ছিল কেজিপ্রতি ৩০ টাকা দরে। নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকায়। এ ছাড়া বেগুন ৭০, মুলা ৬০ ও ঝিঙে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। মোটা মসুর ডালের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
উখিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, ৩৫ টাকা কেজির চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। তেল-ডাল-সবজি সবকিছু কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় মানুষের বাজার খরচ বেড়ে গেছে বলে তিনি জানান।
শুধু নিত্যপণ্য নয়, বেড়েছে গাড়িভাড়াও। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির থেকে উখিয়া উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। টমটম গাড়িতে (ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক) করে এই পথের ভাড়া আগে ছিল জনপ্রতি ১০ টাকা। দেড় মাস ধরে নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। মানুষের ঢলের কারণে দিনমজুরির কাজ ছেড়ে এখন টমটম চালাচ্ছেন মো. নূর। তিনি বলেন, যাত্রী প্রচুর। তাই আয় বাড়াতে টমটম চালাচ্ছেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।
এদিকে টেকনাফের বাসস্ট্যান্ড বাজারে গতকাল এক কেজি মুলা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। তিত করলা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। ঢ্যাঁড়স ৭০, বরবটি ৭০ টাকা ও মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে প্রতি কেজি সবজির দাম গড়ে ২০ টাকা করে বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানান।
এদিকে গতকালও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকেছে বলে জানান টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের টেকনাফ থেকে উখিয়ার বালুখালী শিবিরে পাঠানো হয়েছে।